সাবধানতা

গত বছরের পহেলা জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হয়েছিল নতুন একটি অধ্যায়। এ অধ্যায় কোনো পজেটিভ বাংলাদেশের নয়। এটা ছিল একটি মর্মান্তিক ও অবিশ্বাস্য বাস্তবতার ইতিহাস। সম্ভাবত এটাই ছিল এদেশের তারুণ্যের সর্বপ্রথম কোনো পরাজয়ের ইতিহাস। যা এদেশের ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি।
ba-8
বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এদেশের তরুণ সমাজ। তারুণ্যের হাত ধরে ১৯৫২ সালে বাঙালি পেয়েছে ‘মাতৃভাষা বাংলা’, ১৯৭১ এ পেয়েছে গর্বের স্বাধীনতা। শুধু মাতৃভাষা আর স্বাধীনতা নয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত দেশবিরোধী সকল কর্মকাণ্ড প্রতিহতে সবার আগে দেখা গেছে এদেশের তরুণদের। যা বিশ্বের কাছে মডেল। কিন্তু গত বছরের গুলশানে জঙ্গি হামলার মধ্যদিয়ে কলঙ্কের দাগ বাংলাদেশের তারুণ্যের এই উজ্জল ইতিহাসে। কেননা এই শ্বাসরুদ্ধকর জঙ্গি হামলাও ঘটিয়েছে এদেশেরই ছয় তরুণ।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো হামলাকারী তরুণেরা সমাজের আধুনিক ও উচ্চশ্রেণির পরিবারগুলোর সন্তান। এর আগে চোখে আসা জঙ্গিবাদের কিছু ঘটনায় মাদ্রাসা পুড়ুয়াদের নাম উঠে আসলেও গুলশান হামলার বিষয়টা ছিল সেখানেও ব্যতিক্রম। গুলশানের হামলাকারী তরুণরা যেমন ছিল উচ্চ শ্রেণির সন্তান তেমনি তারা উচ্চ শিক্ষিতও। তাও আবার কোনো মাদ্রাসা নয় বরং তারা পড়ালেখাও করেছে দেশের সেরা ও অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে।
গুলশান হামলা ও পরবর্তী সময়েও জঙ্গি সম্পৃক্ততার সঙ্গে যেসব তরুণের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশই তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ এবং এলিট পরিবারের সন্তান। শুধু জঙ্গিবাদ নয় দেশে ইভটিজিং বা ধর্ষণসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উঠে আসছে একই শ্রেণির তরুণদের নাম। যা ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল পুরো দেশবাসীর কপালে। সবারই ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো কোনো প্রকার উগ্রবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্তেও কিভাবে, কেনইবা ধর্মীয় উগ্রবাদে জড়ালো এসব তরুণ? আর তখনি আলোচনায় উঠে এসেছে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার প্রসঙ্গ। এসেছে পরিবারের উদাসীনতার কথাও।
গুলশান হামলা পরবর্তী সময়ে তরুণদের জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, তারুণ্যকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হলে পরিবারকে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। শিশু-কিশোরদের সময় দিতে হবে, দিতে হবে যথাযথ মূল্যবোধের শিক্ষা।

Comments

Popular posts from this blog